যারা শহীদ হয়েছেন, ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মা আল্লাহর কাছে পুষ্পপল্লবে ঘেরা ঘন সবুজ শ্যামল বৃক্ষলতায় পরিপূর্ণ সুরভিত জান্নাতে বিচরণ করছে। শহীদ এবং ঈমানসহ মৃত্যুবরণকারী সকল মুসলিমের আত্মাই তাদের যোগ্যতা ও আমলের তারতম্য অনুসারে পাখিরূপে জান্নাতে রয়েছে বলে বিশুদ্ধ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শহীদগণের রূহ আল্লাহর সান্নিধ্যে সবুজ পাখিদের মধ্যে থাকবে এবং জান্নাতের বাগ-বাগিচা ও নহরসমূহে ভ্রমণ করবে”। [সহীহ মুসলিম]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “মুমিনের আত্মা একটি পাখি হিসেবে জান্নাতের বৃক্ষরাজিতে বিচরণ করতে থাকবে। আল্লাহ যেদিন তাকে পুনুরুত্থিত করবেন সেদিন তার দেহে আত্মাটি ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত এভাবেই থাকবে”। [আহমাদ, সনদ হাসান ]
অপর একটি বর্ণনায়, “শহীদ্গণের আত্মার প্রতি আল্লাহ দৃষ্টি দিবেন এবং বলবেন তোমরা কি কিছু কামনা করছ? তাঁরা বলবেন, আমরা আর কি কামনা করব ! আমরা তো যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিচরণ করছি”। [মুসলিম]
শহীদগণ যেখানে আল্লাহর কাছেই কিছু কামনা করছে না, সেখানে কি তারা আমাদের এসব মূল্যহীন পুষ্পস্তবকের জন্যে অপেক্ষা করছে?
শহীদ ও মৃত ব্যক্তিদের জন্যে অন্তরে বাস্তব দরদ থাকলে, তাদের ত্যাগ তীতিক্ষার বিনময়ে কিছু দেওয়ার মনোবৃত্তি থাকলে সেপথটি খুঁজতে হবে, যে পথে কিছু করলে তারা পরকালে উপকৃত হবেন। সে পথটি হল আল্লাহর অনুমোদিত পথ। শহীদ ও মৃতদের জন্যে তাদের নিয়ত করে তাদের উদ্দেশ্যে কেউ যদি দান খয়রাত করেন, তাদের উদ্দেশ্যে, তাদের পক্ষ হয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করেন তাহলে এর বিনিময়ে তারা শত কোটি পুষ্প অফুরন্ত নেয়ামত, ফুলে ফলে ভরা উদ্যানের মালিক হতে পারেন আল্লাহর কাছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি একবার সুবহানাল্লাহ বলল তার জন্য একটি খেজুর গাছ লাগানো হবে জান্নাতে”। [তিরমিযি]
অপর বর্ণনায় রয়েছে, “সে গাছটির ছায়ায় একশত বছর দ্রুতগামী ঘোড়া দৌড়ালেও তার ছায়া শেষ করা যাবে না”। বুঝা গেল, পৃথিবীতে বসে সৎ কর্মের মাধ্যমে উর্ধজগতে নিজের জন্য কিংবা কোন মৃতের জন্যে উদ্যান তৈরি করা যায়। পৃথিবীতে বসে এমন কাজটি করতে হবে যা ঊর্ধজগতের বাসিন্দাদের নিকট পৌঁছায়। তার পদ্ধতি আমরা উল্লেখ করেছি। আর এটাই হল তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের আমলগুলো তোমাদের মৃত নিকটাত্মীয় ও তোমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে তাদের কবরে পেশ করা হয়। আমলগুলো ভাল হলে তারা আনন্দিত হয় আর অন্য কিছু হলে তারা বলে হে আল্লাহ তাদেরকে তোমার আনুগত্যের আমল করার এলহাম কর”। [আবু দাউদ, তাবারানী,আহমাদ]
বুঝা গেল, শহীদ ও মৃতদেরকে তারাই আনন্দিত ও উপকৃত করে যারা তাদের জন্যে দুয়া ও দান খয়রাত করে। পুস্পস্তবক অর্পণকারীদের এই কর্মে তারা কবরে দুঃখ অনুভব করেন। আমাদের দেশে যা করা হয় এতে মনে হয় শহীদগণ শহীদ হয়ে যেন অপরাধ করে গেছেন। তাদের নামে এমন সব কর্মকাণ্ড করা হয় যা তাদের ত্যাগ তীতিক্ষার প্রতি উপহাসের শামিল।
ইট, সিমেন্ট,রড দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে সেখানে কিছু ফুল রেখে আসলে তা কি শহীদগণ পেলেন নাকি ঐ ইট, সিমেন্ট, রডগুলোকেই দেয়া হল সেই ফুলের সওগাত?
কাদের থেকে শিখেছি এই পুস্পস্তবক অর্পণ? মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত দীনে পুস্পস্তবক অর্পণের কোন বিধান নেই। মৃতদের জন্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ খ্রিস্টান জাতির সংস্কৃতি। হিন্দু ধর্মেও মূর্তিকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শুধু পুস্পস্তবক অর্পণ নয় মিষ্টি, সন্দেশ, দুধ কলার স্তবকও অর্পণ করা হয় দেবভোগ হিসেবে। আল কুর’আনে ইবরাহীম আলাইহি সালামের ঘটনা বর্ণণা প্রসংগে বলা হয়েছে-
“অতঃপর সে তাদের দেবালয়ে, গিয়ে ঢুকল এবং বললঃ তোমরা খাচ্ছ না কেন? তোমাদের কি হল যে, কথা বলছ না?” [সূরা সাফফাত ৯১-৯২]
মূলত পুস্পস্তবক অর্পণ মূর্তিপূজার অংশ, এটি একটি ইবাদত যা মূর্তিকে দেয়া হয়। কাজেই মুসলিমদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহনের কোন সুযোগ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়”। [আবু দাউদ, সনদ উত্তম]
সৌজন্যঃ মোহাঃ আবু জার গিফারী- জাহিদ
সাউথ এশিয়ান স্পেশালাইজ এডুকেশন গ্রুপ কুষ্টিয়া।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন